Article | Blog
যাদের প্রতিটি গান যেন জীবনের এক একটি গল্প | শিরোনামহীন ব্যান্ড
বাংলাদেশি ব্যান্ডগুলোর মধ্যে ভিন্ন সুর, কথা নিয়ে কাজ করে এমন ব্যান্ড শিরোনামহীন। নাগরিক গন্ধ লেগে থাকা লিরিক্স আর বাজনার ছন্দে মিশে গিয়ে সব ভিন্ন সুরের গান দিয়ে দর্শকদের মাত করতে সময় লাগেনি। শিরোনামহীন ১৯৯৬ সালের গঠিত ঢাকা শহর ভিত্তিক বাংল রক ব্যান্ড, ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে ঢাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড সঙ্গীত থেকে উঠে এসে প্রোগ্রেসিভ রক, সাইকেডেলিক রক, এবং লোক ধাঁচের সঙ্গীতের জন্য তারা খ্যাতি অর্জন করে। এবং গানের দর্শন, সুর এবং জনবহুল সরাসরি পরিবেশেনার জন্য দলটি বাংলা প্রোগ্রেসিভ রক ধারায় শীর্ষ স্থানীয় ব্যান্ডগুলিতে একটি হয়ে ওঠে এবং দলটিকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, অর্জন করেছো লাখো শ্রোতার ভালোবাসা। তারা তাদের ক্লাসিকাল রক, প্রোগ্রেসিভ রক, এবং ফোক ধাঁচের সঙ্গীতের জন্য খ্যাতি অর্জন করে। গানের কথা, কম্পোজিশন এবং জনবহুল লাইভ শোর জন্য তারা বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যন্ডসমূহের মধ্যে অন্যতম স্থান অর্জন করেছে। সঙ্গীতের কাজে তাদের ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রসমূহের মধ্যে রয়েছে সরোদ, স্যালো, সরাজ, বেহালা এবং আরও অনেক।
![]() |
img_src: Shironamhin Band |
'শিরোনামহীন' নামকরণঃ
১৯৯৬ সালের কথা, জিয়াউর রহমান জিয়ার বাসার পাশেই ছিল বুলবুল ভাইয়ের বাসা। তিনি ছিলেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, পাশাপাশি গান করতেন। অন্যদিকে জিয়ার সঙ্গে নিয়মিত গিটার বাজাতেন জুয়েল। তিনজনের প্রায়ই দেখা হতো, গান নিয়ে আড্ডা হতো। এভাবেই একসময় ব্যান্ডের ভাবনাটি আসে তাদের। জাস্ট ভালো লাগা থেকেই শুরু করা। জিয়া বলেন, বুলবুল ভাই ভালো গাইতেন বলে তাঁকে দেওয়া হয় ভোকালের দায়িত্ব, গিটারে জুয়েল আর আমি। দুজনই তখন অ্যাকুস্টিক বাজাতাম। গান লেখা আর সুরের কাজটাও ছিল আমার। বানাতে বানাতে প্রায় ৫০টির মতো গান জমে। আশপাশের লোকজন এবং বন্ধু সার্কেলে কিছু গান ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে গানের কথার জন্য সবাই আমাদের প্রশংসা করতে থাকে। আমাদের গান শুনে একদিন পদাতিক নাট্য সম্প্রদায় প্রস্তাব দেয় টিএসসি অডিটরিয়ামে তাদের একটি শোয়ের আগে গান করতে। মৌলিক গান দিয়েই সেখানে আমরা নিজেদের উপস্থাপন করি। এটাই ছিল প্রথম কোনো অনুষ্ঠানে আমাদের অংশগ্রহণ। দিনটি ছিল ১৪ এপ্রিল। তখনও ব্যান্ডের নাম ঠিক করা হয়নি, এদিকে উপস্থিত সবাই আমাদের তথা আমাদের ব্যান্ডের নাম জানতে চায়! যেহেতু তাদের অফিসিয়াল কোন নাম নেই তাই তৎক্ষণাৎ সে অনুষ্ঠানেই ‘শিরোনামহীন’ নামটি দেওয়া হয়। আর তাই এ দিনকেই শিরোনামহীন ব্যান্ডের জন্মদিন পালন করা হয়।১৯৯৬-২০০৪
শুরুর প্রথমদিকেই ভাঙা গড়ার খেলাবছর চারেক এভাবেই চলে শিরোনামহীন। শুরুর দিকের শুধু জিয়াউর রহমান ছাড়া আর কেউ নেই। তবে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গানের ভক্ত বুলবুল ব্যান্ডের ভোকাল হিসেবে নিজেকে মানাতে পারছিলেন না। তিনি চলে গেলে ব্যান্ডে ভোকাল হিসেবে যোগ দেন মহিন। ২০০০ সালের পুরো সময়টা ব্যান্ডটির সঙ্গে ছিলেন তিনি। এ বছর ‘স্টার সার্চ : বেনসন অ্যান্ড হেজেস’ প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয় শিরোনামহীন। এক বছর পর দেশের বাইরে চলে যান মহিন। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে চতুর্থ সদস্য হিসেবে মহিনের স্থলাভিষিক্ত হন ব্যান্ডটির প্রধান ভোকাল হিসেবে "তানযীর তুহিন"। ২০০২ সালে ফারহান (সরোদ), তুষার (গিটার) ও শাফিনকে (ড্রামস) নিয়ে লাইনআপটা দীর্ঘ করা হয়। ফলও আসে। জিয়া ব্যান্ডের প্রাথমিক গীতিকার এবং ধারণাগত নেতা হয়ে ওঠে এবং ২০০৪ সালে তাদের প্রথম অ্যালবাম জাহাজী প্রকাশ করে।
জাহাজী (২০০৪)
এই নতুন লাইনআপে প্রায় বছর তিনেক কাজের পর এবং ব্যান্ড গঠনের প্রায় আট বছর পর ২০০৮ সালে শিরোনামহীন তাদের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ করে "জাহাজী"; ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে র্যাবিট কমিউনিকেশন স্টুডিওতে শিরোনামহীন তাদের কিছু গান রেকর্ড করে। বিভিন্ন সেশনে তারা গানগুলি রেকর্ডের কাজ করেছিল। ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে জি-সিরিজ থেকে জাহাজী অ্যালবামটি মুক্তি পায়। 'জাহাজী' প্রকাশের অল্পদিনেই ব্যাপক সাড়া ফেলে শ্রোতা মহলে। প্রথম অ্যালবামের গানে সেতারের ব্যবহার গানগুলোতে যোগ করেছিল ভিন্ন স্বাদ। অ্যালবামটিতে শিরোনাম ট্র্যাকসহ ১১টি গান সংকলিত হয়েছে। সাতটি গান এককভাবে রচনা করেছেন জিয়া। অন্যদিকে "নদী" ও "হয় না" গান রচনা করে তুহিন এবং ফারহান "নিশ্চুপ আঁধার" ও "ঘুম" গান দুটি রচনা করেন। নগরজীবন এবং জীবনসংগ্রাম মূলত অ্যালবামটির ভিত্তি, যার প্রকাশ রয়েছে শিরোনাম ট্র্যাকে। সাংস্কৃতিক আগ্রহ, জনাকীর্ণ নগরদৃশ্য, ব্যস্ত ট্রাফিকের জীবন ইত্যাদি রূপক এবং ঘটনাগুলি অ্যালবামটির উপজীব্য হয়ে উঠেছে। মূলত আধুনিক শহুরে মানুষের জীবনবোধ এবং নিত্য সংগ্রামচিত্র বিবৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে অ্যালবামটিতে। মুক্তির পর অ্যালবামটি প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছিল। অ্যালবামের সাইকেডালিক রক ঘরানার "হাসিমুখ" গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বলা যায় "হাসিমুখ" গানটাই শিরোনামহীনকে পরিচিতি এনে দিয়েছে। জিয়া ১৯৯৮ সালে গানটি রচনা ও সুর করেছিলেন। টেলিভিশন বিজ্ঞাপনেও গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল।
জাহাজী এ্যালবামের গানগুলো হলোঃ
- "Nodi (নদী)"
- "Hashimukh (হাসিমুখ)
- "Suvro Rangin (শুভ্র রঙ্গিন)"
- "Sohorer Kotha (শহরের কথা)"
- "Jahaji (জাহাজি)"
- "Shunno (শূন্য)"
- "Lal Neel Golpo (লাল নীল গল্প)"
- "Nishcup Adhar (নিশ্চুপ আঁধার)"
- "Hoyna (হয়না)"
- "Ghum (ঘুম)"
- "Obak Vromon (অবাক ভ্রমন)" (Instrumental)
জাহাজী এ্যালবামের সবগুলো গানের লিরিক্সঃ এইখানে ক্লিক করুন
ইচ্ছে ঘুড়ি (২০০৬)
২০০৬ সালে, শিরোনামহীন তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম ইচ্ছে ঘুড়ি রেকর্ডের জন্য জি-সিরিজ স্টুডিওসে ফিরে আসে। অ্যালবামটিতে তারা কিছু নিরীক্ষা করার চেষ্টা করেছিল। সরাসরি পরিবেশনার জন্য উপযুক্ত রচনাগুলিতে পরিপক্কতা আনতে নিজস্ব শৈলী ঠিক করার প্রচেষ্টা করে তারা। গানের কথায় শহুরে সংকট প্রকাশের চেষ্টা রয়েছে যদিও তারা কোনও মন্তব্য বা পরামর্শ প্রদানের চেষ্টা করেননি। "ক্যাফেটেরিয়া" গানটি স্বতন্ত্র কোণ থেকে বিচার করার গল্প। এটি এমন এক মুহুর্তের উপর ভিত্তি করে তৈরি যে কেউ তার ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়ায় প্রবেশ করে এবং আড্ডায় চারপাশের শব্দ এবং ধোঁয়ার মধ্যে দুটি নীরব চোখ অনুভব করে। মূলত এটি নস্টালজিক গান। পরবর্তীতে ২০২০ সালে "ক্যাফেটেরিয়া পেরিয়ে" শিরোনামে গানটির একটি সিক্যুয়েল প্রকাশিত হয়। এছাড়াও অ্যালবামের জনপ্রিয় গানের মধ্যে "পাখি" ২০০৬ সালে সেরা গান বিভাগে সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক পুরস্কার লাভ করে।
ইচ্ছে ঘুড়ি এ্যালবামের গানগুলো হলোঃ
- "Borosha (বরষা)"
- "Pakhi (পাখি)"
- "Cafeteria (ক্যাফেটেরিয়া)"
- "Swadesh (স্বদেশ)"
- "Voboghure Jhor (ভবঘুরে ঝড়)"
- "Ruposhi Nogor (রূপসী নগর)"
- "Nishongo (নিঃসঙ্গ)"
- "Onno Keu (অন্য কেউ)"
- "Onek Asha Niye (অনেক আশা নিয়ে)"
- "Icche Ghuri (ইচ্ছে ঘুড়ি)"
- "Ditiyo Jibon (দ্বিতীয় জীবন)"
অ্যালবামটি বের হওয়ার কিছুদিন পরই পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান ফারহান। এরপর থেকে সরোদ বাজানোর কাজটা জিয়া ও শাফিনই করতে থাকেন।
ইচ্ছে ঘুড়ি এ্যালবামের সবগুলো গানের লিরিক্সঃ এইখানে ক্লিক করুন
বন্ধ জানালা (২০০৯)
২০০৮ সালে নতুন সদস্য হিসেবে রাজীব (কিবোর্ড) যোগ দেয়ার পর পর তারা বন্ধ জানালা অ্যালবামের কাজ শুরু করে। ২০০৯ সালে জি-সিরিজ এবং অগ্নিবীণার প্রযোজনায় অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়। অ্যালবামটিতে শিরোনাম ট্যাকসহ ১০টি গান সংকলিত হয়েছে। অ্যালবামটিতে এসরাজ, বোধন (আইরিশ উপকরণ), ব্যাঞ্জো, স্যাক্সোফোন এবং ট্রাম্পেটের ব্যবহার রয়েছে যা মূলধারার পপ বা রক সঙ্গীতে প্রায়শই ব্যবহৃত হয় না। সেদিক থেকে বন্ধ জানালা শিরোনামহীনের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছিল। অ্যালবামটি প্রাণবন্ত সুরসংযোজনে সমৃদ্ধ ছিল। গীতিধর্মীর দিক থেকে শিরোনামহীন তাদের ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত শহুরে জীবনধারা ও তার কিছু বড় দৃষ্টিকোণ নিয়ে, সেই সাথে ঐতিহাসিক ঘটনা বা আন্দোলন নিয়ে কাজ করতে চেয়েছে। তাদের "বাস স্টপেজ" গানটি একটি বাস স্টপের চারপাশে নিয়মিত জীবনচিত্রের ওপর ভিত্তি করে। যার একটি চরিত্র তার স্বপ্নকে কোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তাই জিয়া লিখেছে, "কিছু স্বপ্ন বিক্রি করে যারা"।
বন্ধ জানালা এ্যালবামের গানগুলো হলোঃ
- "Bondho Janala"
- "Bullet Kingba Kobita"
- "Shurjo"
- "Eka"
- "Shohosha Deep"
- "Bus Stoppage"
- "Suprovat"
- "Bangladesh"
- "Bhalobasha Megh"
- "Porichoy"
বন্ধ জানালা এ্যালবামের সবগুলো গানের লিরিক্সঃ এইখানে ক্লিক করুন
শিরোনামহীন রবীন্দ্রনাথ (২০১০)
"আমরা বিশ্বাস করি রবীন্দ্রনাথ নিজেই একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান।"
—শিরোনামহীন
২০১০ সালে তুষারের পরিবর্তে গিটারবাদক হিসেবে দিয়াত খান ব্যান্ডে যোগ দেন। বন্ধ জানালা অ্যালবামের সাফল্যের পর শিরোনামহীন ভিন্নধারায় তাদের চতুর্থ অ্যালবাম প্রকাশের ঝুঁকি নেয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১০ সালে প্রকাশিত অ্যালবামের নাম রবীন্দ্রনাথ, যেটি মূলত দলটির রক ধারায় রবীন্দ্রসঙ্গীত সংকলন। একইসাথে বাংলাদেশে কোনো ব্যান্ডের এটিই ছিল প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত অ্যালাবাম। রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান থেকে শুরু করে পশ্চিমা ধাঁচের গানও স্থান পেয়েছে অ্যালবামটি। জিয়া মনে করেন, শিরোনামহীনের অনেক ভক্ত, বিশেষত কিশোর-কিশোরীরা রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাথে তেমন পরিচিত নন। ফলে এটি তরুণ শ্রোতাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর প্রয়াস। অ্যালবামের সঙ্গীত রচনায় ধ্রুপদী, বাউল, লোক, র্কীতন, ভাবানুবাদ এমনকি পশ্চিমা সঙ্গীতের মিশ্রণ ঘটেছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতগুলোর সুরোরোপে তারা দেশি-বিদেশি ৩৯টি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে। এই অ্যালবামের জন্য তারা রেইনমেকার, দারবুকা, টিনের বাঁশি এবং বোধ্রান ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে। রবীন্দ্রগবেষক ও ছায়ানটের শিল্পীদের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়েছিল। মূলত এটি ছিল রক ধারায় ধ্রপদী সঙ্গীতের পরিবেশন। প্রকাশের পর অ্যালবামটি বাণিজ্যিক সাফল্য লাভ করেছিল।
শিরোনামহীন রবীন্দ্রনাথ এ্যালবামের গানগুলো হলোঃ
- "Gram Chhara Oi Ranga Matir Poth"
- "Purano Sei Diner Kotha"
- "Shangana Gogone"
- "Fule Fule"
- "Kichu Bolbo Bole Eshechilem"
- "Jete Jete Akla Pothe"
- "Sokatore Oi Kadiche Sokole"
- "Tumi Ki Keboli Chobi"
- "Sudhu Tomar Bani Noy Go"
শিরোনামহীন রবীন্দ্রনাথ এ্যালবামের সবগুলো গানের লিরিক্সঃ এইখানে ক্লিক করুন
শিরোনামহীন (২০১৩)
শিরোনামহীনের সর্বশেষ অ্যালবাম শিরোনামহীন (২০১৩); রবীন্দ্রনাথ প্রকল্পের পর ২০১০ সাল থেকে শিরোনামহীন নতুন অ্যালবামের গান নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১১ সালে রাজীবের পরিবর্তে রাসেল কবির (কিবোর্ড) ব্যান্ডে যোগ দেন। ১৭ বছরের সঙ্গীত সফরের পরে শিরোনামহীন ২০১৩ সালে তাদের প্রথম স্ব-শিরোনাম এবং পঞ্চম অ্যালবাম "শিরোনামহীন" প্রকাশ করে। ২৫টি গানের মধ্য থেকে নির্বাচিত ১০টি গান অ্যালবামটিতে প্রকাশিত হয়েছে। গানগুলি ঢাকার বাংলামোটরের ইনকার্সন মিউজিকে রেকর্ড করা হয়। অ্যালবামের "আবার হাসিমুখ" গানটি তাদের পূর্রবর্তী "হাসিমুখ" গানের একটি সংস্করণ। অ্যালবামটির মাধ্যমে শিরোনামহীন অতীতের জানালার মাধ্যমে নতুন আলোকে আমন্ত্রণ জানাতে তাদের স্বীকারোক্তি, চাহিদা, ক্রোধ, আশা এবং প্রত্যাশা সংকলনের প্রচেষ্টা চালায়। গীতিকথার দৃষ্টিকোণ থেকে অ্যালবামটি নেতিবাচক জীবনযাপনের ইতিবাচক দিক বর্ণনা করে। সাঙ্গীতিকভাবে শিরোনামহীন বেহালা, চেলো, পাবলিক ক্লাসিক অর্কেস্ট্রেশনে রক গিটার, বেস এবং ড্রামের সাথে মিশ্রিত কনট্রাবাস বিভাগের উপর ভিত্তি করে সঙ্গীত রচনা করে।
শিরোনামহীন শিরোনামহীন এ্যালবামের গানগুলো হলোঃ
- Abar Hashimukh (আবার হাসিমুখ)"
- "Bristikabbyo (বৃষ্টিকাব্য)"
- "Kichu Kotha (কিছু কথা)"
- "Pori (পরী)"
- "Rod Canvas (রোদ ক্যানভাস)"
- "Shonshon, Jodio Kashbon (শন্শন্, যদিও কাশবন)"
- "Ahoto Kichu Golpo (আহত কিছু গল্প)"
- "Michil (মিছিল)"
- "Chithi (চিঠি)"
- "Aatotayee (আততায়ী)"
শিরোনামহীন শিরোনামহীন এ্যালবামের সবগুলো গানের লিরিক্সঃ এইখানে ক্লিক করুন
ভোকাল তানযীর তুহিন আর গীতিকার, সুরকার, বেসিস্ট জিয়া এই লাইনাপে বেশ দীর্ঘকাল ব্যান্ড চলতে থাকে কিন্তু ব্যক্তিগত অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে ২০১৭ সালে তুহিন শিরোনামহীন ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে নতুন ভোকাল হিসেবে শেখ ইশতিয়াক ব্যান্ডে যোগ দেন। ভোকাল শেখ ইশতিয়াক'কে নিয়ে শুরু হয় শিরোনামহীনের নতুন পথচলা। এই লেখা প্রকাশ অব্দি শিরোনামহীন শেখ ইশতিয়াকের গাওয়া পাঁচটি গান রিলিজ করেছে যদিও এখনও অব্দি কোন এ্যালবাম বের করেনি হয়তো সামনে পরিকল্পনা আছে।
শিরোনামহীনে শেখ ইশতিয়াকের গাওয়া একক গানগুলো হলোঃ
- জাদুকর
- বোহেমিয়ান
- এই অবেলায়
- ক্যাফেটেরিয়া পেরিয়ে
- কাশফুলের শহর দেখা
মিক্সড ও ব্যান্ড অ্যালবাম মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তাঁদের প্রকাশিত মৌলিক গানের সংখ্যা ৫০+ বাংলাদেশের প্রথম দিককার প্রোগ্রেসিভ এবং সাইকেডেলিক সঙ্গীত দলগুলির অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত শিরোনামহীন তাদের সঙ্গীতজীবন শুরু করেছিল ঢাকার আন্ডারগ্রাউন্ড সঙ্গীতের মাধ্যমে। বহুবাদ্যযন্ত্রবিশিষ্ট দল হিসেবে সঙ্গীতে বিভিন্ন যন্ত্রের সমন্বয় শিরোনামহীনকে অনন্য করে তুলেছে। ২০১১ সালে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে তুহিন জানান, শিরোনামহীনের গানে প্রেম বা বিরহের তুলনায় জীবনবোধ এবং দর্শন রয়েছে। শুরু থেকেই গতানুগতিক বাংলা গানের ধারার বাইরে তারা গান করে আসছেন।
বর্তমান লাইনআপঃ
Posted: Tuesday, December 7, 2021
- জিয়াউর রহমান জিয়া - গীতিকার, সুরকার, বেস, সরোদ (১৯৯৬–বর্তমান)
- কাজী আহমাদ শাফিন - ড্রাম, সরোদ, বাঁশি (২০০৩-বর্তমান)
- দিয়াত খান - লিড (২০১০-বর্তমান)
- শেখ ইশতিয়াক - কণ্ঠ (২০১৭-বর্তমান)
- সাইমন চৌধুরী - কিবোর্ড (২০১৯-বর্তমান)
প্রাক্তন সদস্যঃ
- বুলবুল হাসান - কণ্ঠ (১৯৯৬–২০০০; ২০০৩-২০০৫)
- জুয়েল - গিটার (১৯৯৬-১৯৯৯)
- মহিন - কণ্ঠ (২০০০)
- তানজির তুহিন - কণ্ঠ (২০০০-২০১৭)
- ফারহান করিম - সরোদ, দোতারা (২০০২-২০০৬)
- ইয়াসির তুষার - গিটার (২০০২-২০০৯)
- প্রিন্স - কিবোর্ড (২০০৫-২০০৬)
- রাজিব - কিবোর্ড (২০০৮-২০১০)
- রাসেল কবির - কিবোর্ড (২০১১-২০১৭)
'শিরোনামহীন'-এর প্রতিটি গানই যেন নিজের জীবনের এক একটি গল্প। যে গল্পটা হয়তো কখনো কাউকে বলা হয়নি। 'চেনা শহর, চেনা রাস্তা, পরিচিত ঢাকা, ভেসে যাচ্ছি চোখে আলো জ্বেলে জাহাজীর
মতো একা' কিংবা 'একা পাখি বসে আছে শহুরে দেয়ালে, শিস দিয়ে গান গায় ধূসর খেয়ালে' গানগুলো যেন এভাবেই আলো ফেলে কারো কারো জীবনে।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, ব্লগ
Post By: FarhaN Fahidur Rahim
0 মন্তব্য(গুলি)